বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়েছে গাছপালা। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের পিলার ভেঙ্গে পড়েছে। পড়ে গেছে ঘরবাড়ি, উড়ে গেছে টিন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শুরু হয় ঘন্টাব্যাপি কালবৈশাখী এ তাণ্ডব চালায়। গতকাল শুক্রবার দুপুর ৩টার সময়ও বোয়ালমারী প্রায় ২০টি গ্রাম বিদ্যুৎ সংযোগ বিহীন রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ঝড়ে কোন এলাকায় হতাহতে খবর পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, প্রায় ঘন্টাব্যাপি কালবৈশাখি ঝড়ে জেলার বোয়ালমারী উপজেলার প্রায় ১২টি গ্রামের ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় বাড়ির বিদ্যুতের পিলার ভেঙ্গে পড়েছে। পড়ে গেছে ঘরবাড়ি, উড়ে গেছে টিন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শুরু হয় ঘন্টাব্যাপি কালবৈশাখী তাণ্ডব চালায়। গতকাল শুক্রবার দুপুর ৩টার সময়ও বোয়ালমারী ২০টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিহীন রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শেখর ইউনিয়নের সহস্রাইল বাজারের ১২টি ঘর, দরিসহ¯্রাইল গ্রামের মোশারফ ফকির, সানোয়ার ফকির, সুমন ফকির, এনায়েত মোল্যা, মিজান মোল্যা, লিয়াকত মোল্যা, সামিউল শেখ, চাপখন্ড গ্রামের পরিমল বিশ্বাস, বিল্লাল শেখ, কবির খা, হাসেম মোল্যা, লিয়াকত মোল্যা, নাসিরের বাড়িসহ  ভুলবাড়িয়া, মাইটকুমরা গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রাম, কুমরাইল, কলিমাঝি, পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ময়েনদিয়া, জয়পাশা, তামারহাজি, চতুল ইউনিয়নের বড়গা বাজারের কয়েকটি ঘরবাড়িসহ গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সহ¯্রাইল গ্রামের বাসিন্দা সংবাদকর্মী সৈয়দ তারেক আব্দুল্লাহ জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে বাড়ি থেকে বাজারের দিকে জরুরি ওষুধ কিনতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে বাতাস শুরু হলে মেঘের গর্জন হয়। মূহুত্বের মধ্যে উল্লোঘুল্লো বাতাশের গতিবেগ বেড়ে যায়। এ সময় সহ¯্রাইল স্কুল রোডে জামালের বাড়ির সামনে পঙ্কুজের আমগাছ, রেন্টিগাছ ভেঙ্গে পড়ে। একটু হলেই আমার মাথার ওপরই গাছ পড়ার কায়দা। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি।

আলফাডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের টিম লিডার ওবায়দুর রহমান জানান, সন্ধ্যার কালবৈশাখীর ঝড়ে বোয়ালমারীর সহস্রাইল বাজার থেকে আলফাডাঙ্গা সড়কে বড় কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে ছোটবড় যান চলাচল ব্যাহত হয়। খবর পেয়ে আমরা গাছপালা অপসারণ করি। এই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

শেখর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইস্রাফিল মোল্যা জানান, সহস্রাইল বাজারের ১২টি ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেছে। বাজারের অনেক ঘরে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজসহ অন্যান্য মালামাল ছিল। শেখর ও রূপাপাত ইউনিয়নে প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

চাপখন্ড গ্রামের গৃহিণী আলেয়া বেগম জানান, মূহুত্বের মধ্যে ঝড়ে আমার বাড়ির তিনটি ঘর তছনছ করে গেছে। বাড়িতে এমন একটি ঘরও নেই যেখানে আমরা ঘুমাবো। খোলা আকাশের নিচে ঘুমানো ছাড়া উপায় নেই। ঘরে থাকা চাল, ডালসহ মালামাল ব্যবহারের মত কিছুই নাই। ওই গ্রামের বাসিন্দা পরিমল বিশ^াস জানান, আমার বাড়িতে ঝড়ে ৩টি ঘর ভেঙ্গে পড়েছে। ঘরের মধ্যে থাকা পাট ও পিয়াজ বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। প্রায় ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার।

সহস্রাইল বাজারের বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, বাজারের ১০—১২টি ঘর একেবারেই ভেঙ্গে গেছে। ঘরগুলোর চালের টিন ঝড়ে উড়ে গিয়ে গাছে রয়েছে। ব্যবসায়ীদের পাট ও পিয়াজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বাজারের ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোয়ালমারী ডিজিএম মোর্শেদুর রহিম জানান, কালবৈশাখির ঝড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের মেইন লাইন কানাইপুরে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ অনেক জায়গায় দেওয়া এখনো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া বোয়ালমারীর জয়পাশা, চাপখন্ড এলাকায় বিদ্যুতের পিলারও পড়ে গেছে। আলফাডাঙ্গারও কয়েকটি জায়গায় বেশ ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের কর্মীরা রাত থেকেই মাঠে কাজ করছে। গাছপালা পড়ে বিদ্যুতের লাইনের ক্ষতি হওয়ায় অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে আরো সময় লাগতে পারে।

গত শুক্রবার বিকেলে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান জানান, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলমান রয়েছে। ­